Monday 27 April 2015

Mahamuni Balmiki Biography

Mahamuni Balmiki Biography_Bengali
মহামুনি বাল্মীকি
মহাভারতের মতো রামায়ণও ভারতবর্ষের আর একটি মহাকাব্য মহাভারতে আছে পারিবারিক জীবনের বাইরের বিস্তৃত কর্মধারার নীতিসমূহ অন্যদিকে রামায়ণে পারিবারিক জীবনের আদর্শসমূহ বর্ণিত হয়েছে
মানুষের কাছে গৃহই হল তার আশ্রম। এই গৃহাশ্রমের প্রতিটি সদস্যের সম্পর্ক যে কিরূপ মহান ও সুন্দর হতে পারে, তা রামায়ণ পাঠ করে জানা যায়।
রামায়ণ মহাকাব্য ভারতীয় পরিবারের অনুকূল আদর্শ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। রামায়ণের কাহিনী ভারতীয় পরিবারকে উজ্জীবিত করে তুলেছে, প্রাণে পূর্ণতা লাভ করেছে।
মহামুনি বাল্মীকি রামায়ণ মহাকাব্য রচনা করেন। তিনি এই মহাকাব্যের প্রাণপুরুষ ও অন্যতম চরিত্র।
বাল্মীকির জীবন-কাহিনী খুবই আশ্চর্যজনক। শুভবোধ যে কীভাবে মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে, তার একমাত্র উদাহরণ হতে পারে বাল্মীকির জীবন।
একজন দস্যু কীভাবে মহামুনিতে রূপান্তরিত হতে পারেন, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হলেন মহামুনি বাল্মীকি।
যৌবনে বাল্মীকি দস্যু রত্নাকর নামে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি মহামুনি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
মহামুনি বাল্মীকি
প্রাচীনকালে সুমতি নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। দেবদ্বিজে তাঁর খুব ভক্তি ছিল। তাঁর একমাত্র পুত্র হলেন রত্নাকর।
ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য হলেও রত্নাকরের দেবদ্বিজে কোনও ভক্তি ছিল না। শাস্ত্রপাঠ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন ইত্যাদি ব্রাহ্মণদের করণীয় কাজগুলো রত্নাকর মোটেও পালন করতেন না। তিনি পিতামাতার খুবই অবাধ্য সন্তান ছিলেন। সংসারের যাবতীয় কাজ ও দায় তাঁর পিতাকেই পালন করতে হতো।
সুমতি যেখানে পরিবার নিয়ে বাস করতেন, সেখানে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে তাঁর পক্ষে সংসার পালন করা খুবই দুরূহ হয়ে পড়ল। বাধ্য হয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে তিনি ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।
নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে তাঁরা এক গভীর জঙ্গলে এসে পৌছলেন। সেখানেই তাঁরা কুটির তৈরী করে বসবাস করতে শুরু করলেন।
সুমতির বয়স বেড়ে চলল। ক্রমে তিনি বৃদ্ধ হলেন। অবশেষে তিনি কাজকর্ম করার শক্তি হারালেন। ফলে সংসারের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেল। পরিবারের তিনটি প্রাণীর কীভাবে অন্যসংস্থান হবে তার কোনও নিশ্চয়তা রইল না।
লেখাপড়ার সঙ্গে রত্নাকরের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ফলে তাঁর পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ল। রোজগারের অন্য কোনও উপায় না দেখে রত্নাকর দস্যুবৃত্তিকেই বেছে নিলেন।
যে জঙ্গলে তাঁরা বাস করতেন তার মধ্যে দিয়ে পথিকদের যাতায়াতের জন্য একটি পথ ছিল। রত্নাকর সারাদিন সেই পথের ধারে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতেন। কোনও পথিক সেই পথ দিয়ে এলেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বস্ব লুঠ করে তাঁকে হত্যা করতেন।
রত্নাকরের জীবনযাত্রা এভাবেই চলতে থাকল। এইভাবেই তিনি সংসারের দায়ও মিটিয়ে চললেন।
বহু বছর দস্যু রত্নাকরের কর্মকাণ্ড এভাবেই চলল। তাঁর বিভীষিকাময় দস্যু-কাহিনী নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ল।
এই সংবাদ দেবলোকেও পৌছে গেল। বিধাতাপুরুষের ইচ্ছে এই বিভীষিকাময় আদর্শ থেকে এক মহান আদর্শে রূপান্তর। তাই তাঁর আদেশে ৭ জন ঋষি ছদ্মবেশে ঐ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে তীর্থযাত্রা করলেন।
দস্যু রত্নাকর যথারীতি গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন। ঐ ৭ জনকে দেখতে পেয়েই হুংকার দিয়ে তাঁদের পথ রোধ করে দাঁড়ালেন।
রত্নাকর বললেন, “তোমাদের কাছে যা ধনসম্পদ আছে, তা এখনই বের করে দাও। তারপর তোমাদের হত্যা করবো। তার আগে ভগবানের কাছে প্রার্থনাটুকু সেরে নাও।”
রত্নাকরের সঙ্গে এই পথে যাঁরই একবার দেখা হত তাঁকে আর প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে হত না।
ঐ ৭ ঋষির মধ্যে ঋষি অত্রি রত্নাকরকে বললেন, “শোনো দস্যু, আমাদের হত্যা করার আগে আমার দুটো কথা তোমাকে শুনতে হবে। দেখো, আমরা তীর্থযাত্রী। আমাদের কাছে খুব সামান্যই ধনসম্পদ আছে। এই সামান্য ধনের জন্য তুমি ঋষি হত্যার পাপ বহন করবে কেন...?
রত্নাকর অবজ্ঞাভরে বললেন, “দেখুন, আমি পাপকে মোটেও ভয় পাই না। তার কারণ, এই বৃত্তি পালন করে আমি আমার সংসার প্রতিপালন করি। কেবলমাত্র আমার নিজের জন্য একাজ করি না।”
ঋষি অত্রি বললেন, “তাহলে কার জন্য তুমি এপথ বেছে নিয়েছ...?
দস্যু বললেন, “আমি পথিকদের হত্যা করে যে ধনসম্পদ লুঠ করি তা দিয়ে আমার পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্রের ভরণপোষণ করি। অতএব তাঁরাও নিশ্চয়ই এই পাপের দায় বহন করবেন
ঋষি অত্রি বললেন, “তুমি ভুল করছো। এই পাপের দায় একান্তই তোমাকে বহন করতে হবে। তোমার সংসারের আর কেউই এই পাপের দায় বহন করবেন না।”
দস্যু এর প্রতিবাদ করলে ঋষি অত্রি বললেন, “ঠিক আছে, তুমি আমাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে বাড়িতে গিয়ে তোমার পিতা-মাতা ও স্ত্রী-পুত্রকে জিজ্ঞাসা করো যে, তাঁরা তোমার এই পাপের বোঝা বহন করতে স্বীকার করছেন কি...?
লব ও কুশের সঙ্গে মহামুনি বাল্মীকি
দস্যু রত্নাকর পড়লেন বিপাকে। দস্যু হলেও তিনি ব্রাহ্মণসন্তান। তাই জন্মগতভাবে নিজ কর্মফলের চিন্তা তাঁর মনে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। তিনি গভীর চিন্তায় পড়লেন।
ঋষিদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে তিনি বাড়িতে গেলেন।
প্রথমেই পিতার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “পিতা, আমি দস্যুবৃত্তির দ্বারা আপনাদের ভরণপোষণ নির্বাহ করছি। তাই দস্যুবৃত্তির জন্য যে পাপ আমার হচ্ছে, তার দায় আপনি নেবেন তো...?
ছেলের কথা শুনে বৃদ্ধ পিতা বললেন, “দেখো পুত্র, বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ করা প্রতিটি পুত্রেরই কর্তব্য। আমার পুত্র হিসাবে তোমার থেকে সেবা গ্রহণ করা পাপ নয়। কিন্তু দস্যুবৃত্তি করে তুমি যে পাপ সঞ্চয় করেছ তার কোনও দায় আমি গ্রহণ করতে পারি না।”
পিতার কথা শুনে রত্নাকর ব্যথিত চিত্তে স্ত্রীর কাছে গেলেন। স্ত্রীও তাঁর পিতার মতেই সায় দিলেন।
এরপর রত্নাকর মা ও পুত্রকে একই কথা বললেন। তাঁরাও জানালেন তাঁরাও কেউ তাঁর এই পাপের দায় বহন করতে পারবেন না।
দস্যু রত্নাকরের অন্তর্দৃষ্টি লাভ হল। তিনি যথার্থই বুঝলেন যে, এই সংসারে তিনি একেবারেই একা। দিনের পর দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি সংসারের জন্য যে পাপ কাজ করেছেন, তার দায় একান্তই তাঁর। কেউ তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না।
ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন দস্যু রত্নাকর। আবার সেই জঙ্গলে ফিরে গেলেন যেখানে তিনি ঋষিদের গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন। ঋষিদের বাঁধন খুলে দিয়ে তিনি ঋষি অত্রির পায়ে লুটিয়ে পড়লেন এবং কাতর স্বরে পাপমুক্তির পথ বলে দিতে অনুরোধ করলেন।
ঋষি অত্রি তাঁকে সান্তনা জানিয়ে বললেন, “কেবলমাত্র পবিত্র রাম নাম করলেই তুমি পাপমুক্ত হতে পারো।” রত্নাকরকে রাম নাম জপের পরামর্শ দিয়ে তিনি বিদায় নিলেন।
ঋষি অত্রির কাছ থেকে মন্ত্রলাভ করে রত্নাকর রাম নাম জপ করতে বসলেন। তাঁর
চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। আত্মশুদ্ধি কীভাবে হবে এই তখন তাঁর একমাত্র চিন্তা।
একটা গাছের নীচে একাসনে বসে তিনি রাম নাম জপ করে চললেন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। ক্ষুধা-তৃষ্ণা ভুলে একমনে জপ করে চলেছিলেন।
এভাবে জপ করতে করতে তাঁর চারপাশে নানা আগাছা গজিয়ে উঠল। তাঁর সারা শরীর ঢেকে গেল বল্মীক বা উইপোকায়। বল্মীকে তাঁর দেহ ঢেকে গিয়েছিল বলে তাঁর নাম হয়েছিল বাল্মীকি
রত্নাকর রাম-নাম জপ করে আত্মজ্ঞান লাভ করলেন এবং মহর্ষি হিসেবে বরণীয় হলেন। তাঁর দস্যুবৃত্তির নৃশংসতা বল্মীকের মতোই ঝড়ে পড়ে গেল।
তমসা নদীর তীরে অপূর্ব সুন্দর এক প্রাকৃতিক পরিবেশে মহর্ষি বাল্মীকি আশ্রম স্থাপন করলেন। ভরদ্বাজ মুনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন।
দেবর্ষি নারদ একদিন বাল্মীকির আশ্রমে ধর্মালোচনা করতে এলেন। বাল্মীকি তাঁকে বললেন, “হে ঋষিবর, ত্রিভুবনের সব খবর আপনি জানেন। অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে গুণবান, ধর্মজ্ঞ, সত্যবাদী, বীর্যবান আদর্শ পুরুষ কে...? তাঁর নাম ও পরিচয় আমাকে বিস্তারিত জানান”   
দেবর্ষি নারদ বললেন, “হে মহামুনি, আপনি যে মহান পুরুষের সম্পর্কে জানতে চাইছেন, সেরকম পুরুষ খুবই দুর্লভ। কেবলমাত্র ইক্ষাকু বংশের অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র এখন পৃথিবীতে বাস করছেন। তাঁর কাহিনী আপনাকে শোনাচ্ছি।”
রাজা দশরথের মৃত্যুর পর রাম রাজা হন। তিনি বাল্মীকির সমসাময়িক ছিলেন। অযোধ্যার দক্ষিণে প্রবাহিত গঙ্গার দুই উপকূলে বিশাল অরণ্য। সেই অরণ্যের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত তমসা নদী।
দেবর্ষি নারদ বিদায় নেবার পর বাল্মীকি তমসা নদীতে স্নান করতে গেলেন। গুরুর বল্কল হাতে সঙ্গে চললেন শিষ্য ভরদ্বাজ। বাল্মীকির মন-প্রাণ জুড়ে তখন কেবল রামের কথা।
ঘন অরণ্যের পথ ধরে তাঁরা যখন নদীর দিকে যাচ্ছিলেন, তখন একজোড়া ক্রৌঞ্চ (বক) গাছের শাখায় মনের আনন্দে মিথুনে ব্যস্ত ছিল।
জঙ্গলের আড়াল থেকে এক ব্যাধ তীর ছুড়ে ক্রৌঞ্চকে বধ করল। ক্রৌঞ্চটি মাটিতে পড়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগল। ক্রৌঞ্চী এই দৃশ্য দেখে বিরহে কাতর হয়ে চিত্‍কার করতে লাগল।
এই করুণ দৃশ্য দেখে বাল্মীকির মনে একইসঙ্গে ক্রোধ এবং করুণার উদয় হল। সেই মুহূর্তে শোকার্ত ক্রৌঞ্চীর বেদনায় তাঁর অন্তরের অন্তস্থল থেকে মুখ দিয়ে নিজের অজান্তে বেরিয়ে এল এক ছন্দময় কবিতা :
"মা নিষাদ...! প্রতিষ্ঠাঙ ত্বমগম: শাশ্বতী সমা:।
যত্‍ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধী: কামমোহিতম।।"
অর্থাত্‍ হে নিষাদ (ব্যাধ), ক্রৌঞ্চের মিথুনের সময় তুই তাকে বধ করে যে জঘন্য কাজ করলি, তার জন্য সমাজে চিরকাল নিন্দিত হয়ে থাকবি।
 বাল্মীকি নিজেই তাঁর এই শ্লোক শুনে বিস্মিত হলেন। কীভাবে তিনি এই ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করলেন...? শিষ্য ভরদ্বাজকে তিনি বললেন, “শোনো ভরদ্বাজ, আমার মুখ দিয়ে যে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি হ, তা শোক থেকে উত্‍পন্ন হয়েছে। তাই এটি শ্লোক নামে জগতে খ্যাত হবে।”
মহামুনি বাল্মীকির মুখ থেকে যে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি হ, সেটিই আজ শ্লোকরামের জীবনের সমস্ত ঘটনা এই শ্লোকের মাধ্যমে ছিল বলে বাল্মীকিকে বলা হয় আদি কবি
শিষ্য ভরদ্বাজের সঙ্গে আলোচনার সময় প্রজাপতি ব্রহ্মা সেখানে আবির্ভূত হলেন। তিনি বাল্মীকিকে বললেন, “হে মহামুনি, তুমি যে আবৃত্তি করে শ্লোক তৈরী করলে তা আমারই ইচ্ছায় সম্পন্ন হয়েছে। দেবর্ষি নারদের কাছে তুমি রামের জীবনের সমস্ত ঘটনা শুনেছ। আমার ইচ্ছা, তুমি তা শ্লোকবদ্ধ করে রচনা কর।”
প্রজাপতি ব্রহ্মার আদেশে মহামুনি বাল্মীকি এরপর রামায়ণ মহাকাব্য রচনা করলেন। এই মহাকাব্যে প্রায় ২৪,০০০ শ্লোক অনুকূল ছন্দে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। 

Sunday 12 April 2015

Shibram Chakraborty Biography

Shibram Chakraborty Biography_Bengali
শিবরাম চক্রবর্ত্তী
বাংলা সাহিত্যে শিশু সাহিত্যিক হিসেবে শিবরাম চক্রবর্ত্তী সমধিক প্রসিদ্ধ পাশাপাশি অম্লমধুর টীকা-টিপ্পনী এবং গুরুগম্ভীর রচনাতেও তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন
১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই ডিসেম্বর কলকাতায় মামার বাড়িতে শিবরাম চক্রবর্ত্তী জন্মগ্রহণ করেন তাঁর বাবা শিবপ্রসাদ চক্রবর্ত্তী ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ শিবরামের পৈতৃক নিবাস ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার জরুরকবানা অঞ্চলে জন্মসূত্রে তিনি মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
কথার পিঠে কথার বোঝা চাপিয়ে সরসপান রচনার ধারা বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম প্রচলন করেন তাঁর প্রচলিত এই রীতি শিবরামী স্টাইল নামে পরিচিত
শিবরামের কৈশোর কাল কাটে প্রথমে পাহাড়পুরে ও পরে চাঁচলে ছোট থেকেই তাঁর ভবঘুরের মন ছিল তাই কৈশোরেই তিনি নি:সম্বল অবস্থায় গৃহত্যাগ করেন বাইরের জগতের সংস্পর্শে তাঁর বিচিত্র ও নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা হয়
তিনি যে সকল রচনা করেছেন তা মূলত: তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত প্রথম ফসল বাড়ি থেকে পালিয়েএই কাহিনীটি চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে।
স্কুলে পড়াকালীন তিনি স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করেন সেই কারণে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে
শিবরামের প্রথাগত শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি তবে, তিনি ঘরে বসে বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন
স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত থাকার ফলে তিনি দেশবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। বিজ্ঞানীফরোয়ার্ড পত্রিকার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি যুগান্তর নামক একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
বাংলা সাহিত্যে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে কবি হিসেবে। তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ মানুষপরে তিনি বসুমতী’, আনন্দবাজার’, দেশ প্রভৃতি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে অম্লমধুর টীকা-টীপ্পনীর ফিচার লিখে অধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
শিবরাম চকরবরতি এই নামে নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে তিনি বেশ কিছু লিখেছেন এইরকম নজির বাংলা সাহিত্যে সত্যিই বিরল
বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে তিনি সৃষ্টি করেন কৌতুক চরিত্র হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন নামক দুই ভাই ও বিনি এই সিরিজের লেখাগুলির জন্য তিনি সাহিত্য জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন
হাসির ঘটনা ও হাসির কথা লেখার জন্য তিনি হাসির রাজা নামে পরিচিতি লাভ করলেন।
কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মেস বাড়ির একটি ঘরেই শিবরাম জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন। তিনি নিজেই বলতেন, মুক্তারামের তক্তারামে শুক্তোরাম খেয়ে আরামে আছেন।
ব্যক্তিগত জীবনেও শিবরাম খুব রসিক ছিলেন অতি সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে তাঁর মেলামেশা ছিল ফলে দিলখোলা, সদা হাস্যময় শিবরামকে কলকাতার পথেঘাটে প্রায়ই দেখা যেত তিনি শৌখিন ঝলমলে সুন্দর পাঞ্জাবী পরতেন ভক্ত ও প্রিয়জনদের দেখতে পেলেই তাদের ডেকে পকেট থেকে চকোলেট বার করে খাওয়াতেন
শিবরাম চক্রবর্ত্তী প্রধানত: হাস্যরসাত্মক গল্প ও ফিচার রচনাকেই সাহিত্য রচনায় প্রধান মাধ্যম করেছিলেন তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা দেড়শতাধিক
৬০ বছরের জীবনে তিনি দুহাতে লেখেন এবং ষোড়শী নামক শরত্‍চন্দ্রের দেনা-পাওনা উপন্যাসের নাট্যরূপ দেন
তিনি একটি বিখ্যাত নাটক লেখেন নাটকটির নাম যখন তারা কথা বলবে
তাঁর রচিত গ্রন্থ মস্কো বনাম পণ্ডিচেরী রাজনীতির উপর লেখা। তিনি একটি আত্মজীবনীও লেখেন ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা। এই গ্রন্থে সমসাময়িক বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বহু চরিত্র ও ঘটনা স্থান পেয়েছে। সরস ভঙ্গিতে তিনি এই সকল বিষয় বর্ণনা করেছেন।
জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি প্রচণ্ড আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েন। তাঁর এই আর্থিক অস্বাচ্ছলতার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁর জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছিল।
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে আগস্ট শিবরাম চক্রবর্ত্তী মুক্তারামের তক্তারাম ছেড়ে পরলোক ধামে গমন করেন

Mahamuni Balmiki Biography

Mahamuni Balmiki Biography_Bengali মহামুনি বাল্মীকি মহাভারতের মতো রামায়ণও ভারতবর্ষের আর একটি মহাকাব্য । মহাভারতে আছে পারিবারিক জী...