Tuesday, 27 January 2015

Akbar The Great Biography

Akbar The Great Biography_Bengali
সম্রাট আকবর
পৃথিবীর ইতিহাসে আলেকজান্ডার, চন্দ্রগুপ্ত, অশোক, শার্লামেন প্রভৃতি যে কয়জন বিশ্ববিখ্যাত সাম্রাজ্য-নির্মাতার নাম জ্বলন্ত অক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে, আকবরের নাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইউরোপীয় ঐতিহাসিকেরা তাঁকে মহান আখ্যা দিয়েছেন।
আকবর মোগল বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ বাবর ভারতবর্ষে মোগল- সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পিতা হুমায়ূন যখন অমরকোট নগরে তখন তাঁর মহিষী হামিদা ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই অক্টোবর আকবরকে প্রসব করেন।
অমরকোটের মরু-প্রান্তরে জন্মগ্রহণ করায় আকবরের বাল্যজীবন দুখ:কষ্টেই অতিবাহিত হয়েছিল। শৈশবে পিতার সঙ্গে অশ্বারোহণ ও যুদ্ধবিদ্যায় ব্যাপৃত থাকায় আকবর বিদ্যাশিক্ষা করার সময় পাননি। তবে, জীবনের নানা বাধাবিঘ্ন কীভাবে অতিক্রম করতে হয় সে শিক্ষা তিনি আয়ত্ত করে ফেলেন।
১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ূনের মৃত্যু হয়। আকবর তখন ১৪ বছরের কিশোর। সেই বয়সেই তিনি পিতার সিংহাসনে বসেন। প্রথম ৫ বছর বৈরাম খাঁর অভিভাবকত্বে তিনি রাজকার্য পরিচালনা করেন। তারপর একদিন হঠাত্‍ তিনি ঘোষণা করলেন যে, সেদিন থেকে তিনি নিজেই রাজ্যসংক্রান্ত সব কাজ পরিচালনা করবেন। এতে বৈরাম খাঁ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। আকবর ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান। বৈরাম খাঁকে তিনি সুচতুরভাবে দমন করলেন। তাঁর প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে তাঁকে অত্যন্ত কৌশলে দেশান্তরে প্রেরণ করলেন। এই অপূর্ব ক্ষমার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে তিনি তাঁর বিরোধীদেরও মন জয় করলেন।
সম্রাট আকবর
সিংহাসনে আরোহণ করেই আকবর দেখলেন সিংহাসন তাঁর জন্য আরাম বা বিরামের স্থান নয়, বরং এর চারদিকই কণ্টকারাজিতে সমাচ্ছন্ন। সেকারণে প্রথমেই তিনি নিজের সাম্রাজ্য নিষ্কন্টক করতে চেষ্টা করলেন। তাঁর পিতা ও পিতামহ দিল্লীর চারদিকে রাজ্যবিস্তার করেছিলেন। পাঠানদের ক্ষমতা তখনও প্রবল ছিল ; রাজপুতেরা তাঁর ভীষণ শত্রু ছিল। এঁদের সমবেত চেষ্টায় যে কোনও মুহূর্তেই আকবরের ছোট রাজ্য ধূলিসাত্‍ হয়ে যেতে পারত ; কিন্তু আকবর নির্ভীক-নিষ্কম্পচিত্তে রাজ্যের দৃঢ়তা-সাধন ও বিস্তারে মনোনিবেশ করলেন।
সিংহাসনে আরোহণের পর প্রথম কয়েক বছর তাঁর যুদ্ধেই কেটে গেল। তারপর ভারতবর্ষের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত রাজ্যগুলো যখন পরপর মোগল-কেশরীর পদানত হয়ে এল, তখন তিনি তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করবার জন্য যত্নবান হলেন।
আকবর ছিলেন দূরদর্শী ও রাজনীতিজ্ঞ। তিনি বুঝেছিলেন যে, প্রবল হিন্দুজাতির সম্প্রীতির ওপর যদি তাঁর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে তা কিছুতেই নিরাপদ হবে না। একথা বুঝতে পেরেই তিনি হিন্দুদের প্রতি সাম্য-নীতি অবলম্বন করলেন।
রাজ্যের উঁচু পদগুলোতে তিনি হিন্দুদের নিয়োগ করলেন-এমনকি, প্রধান সেনাপতির পদ রাজা মানসিংহকে প্রদান করলেন। তাঁর রাজসভায় গুণবান হিন্দুগণ অবাধে উপযুক্ত আসন লাভ করতেন। হিন্দুদের তিনি জিজিয়া কর থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
হিন্দু ও মুসলমান উভয় জাতির মধ্যে যাঁরা সাধু ও শাস্ত্রজ্ঞ, তিনি তাঁদের সঙ্গে সমানভাবে ধর্মালোচনা করতেন। এই সাম্য-নীতির ফলেই প্রবল-পরাক্রান্ত রাজপুতেরা তাঁর কাছে নতমস্তক হয়েছিলেন এবং তাঁদের অনেককেই তিনি মুসলমান ওমরাহদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্বন্ধে আবদ্ধ করেছিলেন এমনকি, এই দুই প্রবল ধর্মকে তিনি মেলাবার চেষ্টা করেছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি দীন-ই-ইলাহি নামে নামে এক সাধারণ ধর্ম প্রবর্তন করেছিলেন। এসব কারণে তিনি দিল্লীশ্বর বা জগদীশ্বর নামে খ্যাত হন।
সম্রাট আকবর
বাবর মোগল সাম্রাজ্যের সূত্রপাত করেছিলেন, কিন্তু আকবর তার প্রসার ও শ্রীবৃদ্ধি সাধন করেছিলেন। আকবরের রাজনৈতিক সূক্ষ্মদৃষ্টি ছিল অসাধারণ। যুদ্ধ-পিপাসা চরিতার্থ করার জন্য তিনি যুদ্ধ করতেন না, কেবলমাত্র প্রয়োজন হলেই যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতেন। পরাজিত রাজন্যবর্গকে করদ বা মিত্র হিসেবে তাঁদের নিজের রাজ্যে পুন:স্থাপিত করতেন। তিনি অমায়িক, ক্ষমাশীল, দানবীর ও শৌর্য সম্পন্ন ছিলেন।
এককথায় বলা যায়, সাম্রাজ্য-বিস্তারের পক্ষে যেসব শ্রেষ্ঠ গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন, সেগুলির সবকয়টিই তাঁর চরিত্রকে মহিমা-মণ্ডিত করে তুলেছিল।
অর্ধ-শতাব্দী কাল রাজত্ব করার পর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আকবরের মৃত্যু হয়। আগ্রার কাছে সেকেন্দ্রা প্রাসাদে তাঁর মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়।

No comments:

Post a Comment

Mahamuni Balmiki Biography

Mahamuni Balmiki Biography_Bengali মহামুনি বাল্মীকি মহাভারতের মতো রামায়ণও ভারতবর্ষের আর একটি মহাকাব্য । মহাভারতে আছে পারিবারিক জী...